সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ

মানবদেহের রাসায়নিক এবং স্নায়বিক সমন্বয় ব্যবস্থার একটি বিস্তারিত আলোচনা

পর্ব ১: অন্তঃক্ষরা তন্ত্র (রাসায়নিক সমন্বয়)

অন্তঃক্ষরা তন্ত্র হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

১.১ হরমোনের বৈশিষ্ট্য

হরমোন হলো রাসায়নিক বার্তাবাহক যার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

  • রাসায়নিক প্রকৃতি: এগুলি প্রোটিন, পেপটাইড, অথবা অ্যামাইনো অ্যাসিড ডেরিভেটিভস হতে পারে।
  • পরিবহন: রক্ত বা প্লাজমার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।
  • ঘনত্ব: খুব অল্প মাত্রায় উপস্থিত থাকে।

১.২ গ্রন্থির প্রকারভেদ

দেহে তিন ধরনের গ্রন্থি রয়েছে:

  • অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (অনাল): এই গ্রন্থিগুলোর কোনো নালী থাকে না এবং এরা সরাসরি রক্তস্রোতে হরমোন নিঃসরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, পিটুইটারি এবং থাইরয়েড গ্রন্থি।
  • বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (সনাল): এই গ্রন্থিগুলোর নালী থাকে যার মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পদার্থ, যেমন এনজাইম, নিঃসৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, লালাগ্রন্থি এবং ঘর্মগ্রন্থি।
  • মিশ্র গ্রন্থি: এই গ্রন্থিগুলো অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় কাজই করে। উদাহরণস্বরূপ, অগ্ন্যাশয়, শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়।

১.৩ প্রধান অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি এবং তাদের হরমোন

পিটুইটারি গ্রন্থি (হাইপোফাইসিস)

একে "প্রভু গ্রন্থি" (master gland) বলা হয় এবং এটি মটর দানার মতো ক্ষুদ্রতম গ্রন্থি।

অগ্র পিটুইটারি:
  • বৃদ্ধি পোষক হরমোন (GH): দেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এর অভাবে বামনত্ব (Dwarfism) এবং শৈশবে এর আধিক্যে অতিকায়ত্ব (Gigantism) ও প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় অ্যাক্রোমেগালি হয়।
  • থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH): থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে উদ্দীপিত করে।
  • অ্যাড্রেনোকোর্টিকোট্রপিক হরমোন (ACTH): অ্যাড্রেনাল কর্টেক্সকে উদ্দীপিত করে।
  • ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH): নারীদের ক্ষেত্রে, ডিম্বাশয়ের ফলিকলের পরিপক্কতা এবং ইস্ট্রোজেন ক্ষরণে উদ্দীপনা যোগায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে, সেমিনিফেরাস নালিকাকে টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে উদ্দীপিত করে।
  • লিউটিনাইজিং হরমোন (LH): ডিম্বপাত (ovulation) ঘটায় এবং কর্পাস লিউটিয়াম গঠন করে যা প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণ করে।
  • প্রোল্যাকটিন (PRL): স্তনগ্রন্থির বিকাশ ও দুগ্ধ ক্ষরণে সহায়তা করে।
পশ্চাৎ পিটুইটারি:

হাইপোথ্যালামাস দ্বারা উৎপাদিত হরমোন জমা রাখে ও নিঃসরণ করে।

  • অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোন (ADH) / ভেসোপ্রেসিন: বৃক্কে পানির পুনঃশোষণ বাড়িয়ে দিয়ে দেহের পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে মূত্রের পরিমাণ কমে যায়।
  • অক্সিটোসিন: সন্তান প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচন ঘটায় এবং দুগ্ধ নিঃসরণে সহায়তা করে।

পিনিয়াল গ্রন্থি

মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠে অবস্থিত। মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ করে, যা ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে।

থাইরয়েড গ্রন্থি

স্বরযন্ত্রের কাছে অবস্থিত। যেসব হরমোন ক্ষরণ করে:

  • ট্রাই-আয়োডোথাইরোনিন (T3) এবং থাইরক্সিন (T4): এই হরমোনগুলো মেটাবলিক হার এবং ভ্রূণ ও শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ বাড়ায়। এর অভাবে শিশুদের ক্রেটিনিজম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা রোগ হয়। এর আধিক্যে এক্সোপথ্যালমস রোগ হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে ওঠাকে গলগণ্ড (Goiter) বলে।
  • ক্যালসিটোনিন: রক্তে ক্যালসিয়ামের (Ca²⁺) মাত্রা কমায়।

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি

থাইরয়েড গ্রন্থির উপরে অবস্থিত। প্যারাথরমোন (PTH) ক্ষরণ করে, যা রক্তে ক্যালসিয়ামের (Ca²⁺) মাত্রা বাড়ায়, যা ক্যালসিটোনিনের কাজের বিপরীত। এই হরমোন অন্ত্রে Ca²⁺ শোষণও বৃদ্ধি করে।

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি

কিডনির উপরে অবস্থিত। এটি দুটি অংশে বিভক্ত:

  • অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স: কর্টিসল (কার্বোহাইড্রেট বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে) এবং অ্যালডোস্টেরন (খনিজ লবণের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে) হরমোন ক্ষরণ করে।
  • অ্যাড্রেনাল মেডুলা: অ্যাড্রেনালিন (এপিনেফ্রিন) এবং নর-অ্যাড্রেনালিন (নর-এপিনেফ্রিন) ক্ষরণ করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় এবং ভয়, ক্রোধ বা মানসিক চাপের সময় "fight or flight" প্রতিক্রিয়া দেখায়।

অগ্ন্যাশয় (আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস)

এটি একটি মিশ্র গ্রন্থি। এর অন্তঃক্ষরা অংশ হলো আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস, যা নিম্নলিখিত কোষ দ্বারা গঠিত:

  • আলফা কোষ: গ্লুকাগন ক্ষরণ করে।
  • বিটা কোষ: ইনসুলিন ক্ষরণ করে।
  • ডেল্টা কোষ: সোমাটোস্ট্যাটিন ক্ষরণ করে।

গোনাড (যৌন গ্রন্থি)

  • শুক্রাশয় (পুরুষদের ক্ষেত্রে): স্ক্রোটামের ভেতরে অবস্থিত। টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ করে, যা শুক্রাণু উৎপাদন এবং পুরুষের গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য দায়ী।
  • ডিম্বাশয় (নারীদের ক্ষেত্রে): জরায়ুর দুই পাশে অবস্থিত। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণ করে, যা মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে এবং গর্ভাবস্থায় সহায়তা করে। কর্পাস লিউটিয়ামও এই দুটি হরমোন ক্ষরণ করে।

অমরা (Placenta)

গর্ভাবস্থায় এটি একটি অস্থায়ী অন্তঃক্ষরা অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (HCG), এবং হিউম্যান কোরিওনিক সোমাটোম্যামোট্রপিন (HCS) এর মতো হরমোন ক্ষরণ করে।

পর্ব ২: স্নায়ুতন্ত্র (স্নায়বিক সমন্বয়)

স্নায়ুতন্ত্র সারা শরীরে দ্রুত সংকেত পাঠানোর জন্য দায়ী।

২.১ স্নায়ুতন্ত্রের কোষসমূহ

নিউরণ

স্নায়ুতন্ত্রের গাঠনিক ও কার্যকরী একক। নিউরন ভ্রূণীয় এক্টোডার্ম থেকে উদ্ভূত হয়। এর গঠনগত অংশগুলো হলো কোষদেহ (নিসল দানা যুক্ত), ডেনড্রন এবং অ্যাক্সন।

গঠন অনুসারে নিউরনের প্রকারভেদ:

ইউনিপোলার, বাইপোলার (রেটিনা ও ককলিয়ায় পাওয়া যায়), সিউডোইউনিপোলার, এবং মাল্টিপোলার (মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডে পাওয়া যায়)।

নিউরোগ্লিয়া

এগুলো নিউরনকে সুরক্ষা ও পুষ্টি প্রদানকারী কোষ।

  • অ্যাস্ট্রোসাইট: পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • অলিগোডেনড্রোসাইট: মায়োলিন আবরণ তৈরি করে।
  • মাইক্রোগ্লিয়া: ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে।

২.২ সাইন্যাপস এবং সংকেত পরিবহন

সাইন্যাপস হলো দুটি নিউরনের সংযোগস্থল। যখন স্নায়ু সংকেত অ্যাক্সনের প্রান্তে পৌঁছায়, তখন ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca²⁺) প্রবেশ করে, যার ফলে সাইন্যাপটিক ভেসিকল ফেটে যায় এবং নিউরোট্রান্সমিটার (যেমন, অ্যাসিটাইলকোলিন) সাইন্যাপটিক ক্লেফটে নিঃসৃত হয়। এই নিউরোট্রান্সমিটার পরবর্তী নিউরনের রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে সংকেতকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

২.৩ স্নায়ুতন্ত্রের বিভাজন

স্নায়ুতন্ত্র কেন্দ্রীয় এবং প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে বিভক্ত।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (CNS):

মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত। এটি মেনিনজেস নামক তিনটি পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে: ডুরা ম্যাটার (বাইরের স্তর), অ্যারাকনয়েড ম্যাটার (মধ্যস্তর), এবং পায়া ম্যাটার (ভিতরের স্তর)। সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) সাব-অ্যারাকনয়েড স্তরে প্রবাহিত হয়, যা পুষ্টি সরবরাহ ও সুরক্ষা প্রদান করে।

২.৪ মস্তিষ্ক

মস্তিষ্ক হলো দেহের প্রধান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।

অগ্রমস্তিষ্ক (Forebrain)

  • সেরেব্রাম: মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ (প্রায় ৮০%), যা দুটি হেমিস্ফিয়ারে (বাম ও ডান) বিভক্ত এবং করপাস ক্যালোসাম দ্বারা যুক্ত থাকে। ডান হেমিস্ফিয়ার দেহের বাম দিক নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর বিপরীতও সত্য। সেরি ব্রাম উচ্চতর মানসিক কাজ যেমন চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি এবং বাকশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • থ্যালামাস: সংবেদী স্নায়ুর রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে এবং চাপ ও যন্ত্রণার মতো অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।
  • হাইপোথ্যালামাস: থ্যালামাসের নিচে অবস্থিত, এটি পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে হরমোন (অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন) নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, এবং দেহের তাপমাত্রা, আবেগ (রাগ, উদ্বেগ, ক্ষুধা), এবং ভালো লাগা বা ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ করে।

মধ্যমস্তিষ্ক (Midbrain)

হাইপোথ্যালামাসের নিচে অবস্থিত। অগ্র ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ককে যুক্ত করে এবং দর্শন ও শ্রবণের তথ্য সমন্বয় করে।

পশ্চাৎমস্তিষ্ক (Hindbrain)

  • সেরিবেলাম: দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ঐচ্ছিক চলাফেরার দিক ও সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করে।
  • পনস: সেরিবেলামের সামনে অবস্থিত এবং শ্বসনকার্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • মেডুলা অবলংগাটা: পনসের নিচে অবস্থিত এবং হৃদস্পন্দন, শ্বসন, গলাধঃকরণ ও পেরিস্টালসিসের মতো অনৈচ্ছিক ও অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

২.৫ সুষুম্নাকাণ্ড

প্রতিবর্ত ক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এবং ৩১ জোড়া সুষুম্নীয় স্নায়ু নিয়ে গঠিত। এর ভেতরের দিকে গ্রে ম্যাটার এবং বাইরের দিকে হোয়াইট ম্যাটার থাকে।

২.৬ করোটিক স্নায়ু

মস্তিষ্ক থেকে ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ু উৎপন্ন হয়:

  1. অলফ্যাক্টরি: ঘ্রাণ অনুভূতি।
  2. অপটিক: দর্শন অনুভূতি।
  3. অকুলোমোটর: অক্ষিগোলকের সঞ্চালন।
  4. ট্রকলিয়ার: অক্ষিগোলকের সঞ্চালন (সুপিরিয়র অবলিক পেশি নিয়ন্ত্রণ করে)।
  5. ট্রাইজেমিনাল: মুখের মিশ্র স্নায়ু (সংবেদী ও চেষ্টীয়)।
  6. অ্যাবডুসেন্স: অক্ষিগোলকের সঞ্চালন (চোখকে দূরে সরানো)।
  7. ফেসিয়াল: মুখের অভিব্যক্তির জন্য মিশ্র স্নায়ু।
  8. ভেস্টিবুলোককলিয়ার: শ্রবণ ও ভারসাম্য।
  9. গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল: জিহ্বা ও গলবিল নিয়ন্ত্রণ করে।
  10. ভেগাস: স্বরযন্ত্র, ফুসফুস ও পাকস্থলীর মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে।
  11. স্পাইনাল অ্যাক্সেসরি: মাথা ও কাঁধের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।
  12. হাইপোগ্লোসাল: জিহ্বার সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।

পর্ব ৩: সংবেদী অঙ্গ

৩.১ চোখ (দর্শনেন্দ্রিয়)

অক্ষিগোলকের গঠন:

  • স্ক্লেরা: বাইরের সাদা ও অস্বচ্ছ স্তর। এর সামনের স্বচ্ছ অংশকে কর্নিয়া বলে।
  • কোরয়েড: মধ্যবর্তী স্তর যেখানে আইরিশ (চোখের রঙিন অংশ) এবং সিলিয়ারি বডি থাকে। আইরিশের কেন্দ্রে থাকা ছিদ্রটিকে পিউপিল বলে।
  • রেটিনা: সবচেয়ে ভেতরের আলোক সংবেদী স্তর। রেটিনা ফটোগ্রাফিক প্লেটের মতো কাজ করে যেখানে প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয়।
  • লেন্স: আইরিশের পেছনে অবস্থিত দ্বি-উত্তল স্বচ্ছ গঠন যা আলোকে রেটিনায় ফোকাস করে।
  • তরল: অ্যাকুয়াস হিউমার (সামনের দিকে জলীয় তরল) এবং ভিট্রিয়াস হিউমার (পেছনের দিকে জেলির মতো তরল)।

রেটিনার আলোক সংবেদী কোষ:

  • রড কোষ: সংখ্যায় প্রায় ১২-১২.৫ কোটি, কম আলোতে সংবেদনশীল এবং সাদাকালো প্রতিবিম্ব গঠনে সাহায্য করে। এতে রোডোপসিন নামক রঞ্জক থাকে যা ভিটামিন এ থেকে তৈরি হয়। এই কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাতকানা রোগ হয়।
  • কোন কোষ: সংখ্যায় প্রায় ৬০-৭০ লক্ষ, উজ্জ্বল আলোতে কাজ করে এবং রঙিন বস্তু দর্শনে সাহায্য করে। এতে আয়োডোপসিন নামক রঞ্জক থাকে।

রেটিনার বিশেষ অঞ্চল:

  • পীতবিন্দু (Macula Lutea): এখানে কোন কোষের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, যা তীক্ষ্ণ দৃষ্টির জন্য দায়ী।
  • অন্ধবিন্দু (Optic Disc): যে স্থান দিয়ে অপটিক স্নায়ু রেটিনা থেকে বের হয়; এখানে কোনো আলোক সংবেদী কোষ থাকে না।

চোখের আনুষঙ্গিক অংশ:

  • ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি: অশ্রু ক্ষরণ করে যাতে লাইসোজাইম নামক জীবাণুনাশক এনজাইম থাকে।
  • অক্ষিপেশি: অক্ষিগোলকের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে।

৩.২ কান (শ্রবণ ও ভারসাম্য অঙ্গ)

কান প্রধান তিনটি অংশে বিভক্ত:

বহিঃকর্ণ:

  • পিনা (কর্ণছত্র): তরুণাস্থি নির্মিত যা শব্দ তরঙ্গ সংগ্রহ করে।
  • অডিটরি মিটাস (কর্ণকুহর): পিনাকে কর্ণপটহের সাথে যুক্ত করে।

মধ্যকর্ণ:

বায়ুপূর্ণ প্রকোষ্ঠ যেখানে তিনটি ক্ষুদ্র অস্থি (অসিকল) থাকে: ম্যালিয়াস (হাতুড়ির মতো), ইনকাস (নেহাই-এর মতো), এবং স্টেপিস (ঘোড়ার জিনের পাদানির মতো)।

ইউস্টেশিয়ান নালী: মধ্যকর্ণকে গলবিলের সাথে যুক্ত করে এবং কর্ণপটহের দুই পাশে বায়ুর চাপ সমান রাখে।

অন্তঃকর্ণ (ল্যাবিরিন্থ):

  • ককলিয়া: শামুকের মতো প্যাঁচানো গঠন যা শ্রবণের জন্য দায়ী। এর ভেতরে অর্গান অব কর্টি থাকে, যা প্রকৃত শ্রবণ অঙ্গ।
  • ভেস্টিবুলার অ্যাপারেটাস: দেহের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দায়ী। এটি তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালী, ইউট্রিকুলাস এবং স্যাকুলাস নিয়ে গঠিত।